৪ বছর যাবৎ এই চার চাকার ঠেলাগাড়ির ভ্রাম্যমাণ সেলুনেই চলছে আব্দুল বারিকের জীবন সংসার অর্থের অভাবে নির্দিষ্ট স্থানে দোকানের পজিশন নিতে না পারায়, খোলা আকাশের নিচে চার চাকার এই ভ্রাম্যমাণ সেলুন দিয়েছে আব্দুল বারিক। তবে এক সময় গ্রাম বাংলায় দেখা যেতো বাড়ি বাড়ি এসে নাপিতেরা মানুষের চুল ও গোপ কেটে আসতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন নামি দামি সেলুন হওয়ায় আগেকার সেই দৃশ্য দেখা যায় না।
কিন্তুু স্বাধীনতার ৪৯ বছর গাইবান্ধার ফুলছড়িতে দেখা মিললো ভ্রাম্যমাণ এই সেলুনের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা, উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কেতকীরহাট ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে চার চাকার ভ্রাম্যমাণ সেলুন বসিয়ে চুল কাটছে আব্দুল বারী। ভ্রাম্যমাণ সেলুন সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল বারী বলেন, টানা ৪ বার বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে বছর যাবৎ এই ভ্রাম্যমাণ সেলুন বানিয়ে মানুষের চুল ও গোপ কাটার কাজ করছে।
তার এই ভ্রাম্যমাণ সেলুনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকেরা চুল কাটতে আসে। একেকটি মানুষের চুল কাটতে ২৫ টাকা ও শেভ করতে ৩০ টাকা লাগে। সারাদিন কাজ শেষে দুইশত থেকে দুইশত ৫০ টাকা উপার্জন হয়। এই টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ। বছর শেষে আয় বলতে কিছুই থাকে না তাদের। ফলে একটি আধুনিক সেলুন ঘর দিতে পারছি না। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কেউ সাহায্যর হাতও বাড়িয়ে দেয়নি।
সভ্যাতার ক্রম বিবর্তনের ফলে দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রেই এসেছে পরিবর্তন। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন ধরণের আধুনিক সেলুন। তবে পুঁজি কম থাকায় ভাগ্য বদলায় না ওই আব্দুর বারীর। আব্দুল বারী সেলুন তৈরিতে ব্যবহার করেছেন লোহার ফ্রেম দিয়ে তৈরি করা চার কোনা ঘরে চারটি অটোটেম্পুর চাকা, দু’পাশে দুটি চেয়ার, মাঝ খানে আয়না, উপরে কাট-বাঁশ দিয়ে টিনের চালা এবং আব্দুল বারীর মাথার উপর বিভিন্ন রংরের একটি বড় ছাতা।
এটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আব্দুল বারী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের পরিত্যক্ত খোলা জায়গায় রাস্তার কিনারে ফুটপাতে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
চুল কাটতে আসা উড়িয়া গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, চুল কাটার দোকানে গিয়ে চুল কাটলে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাগে। কিন্তু এই ভ্রাম্যমান সেলুনে ২৫ টাকাতে চুল কাটা যায়। বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে ভ্রাম্যমান সেলুন যেতে দেখলেই যখন তখন মানুষ চুল কাটিয়ে নিতে পারে। এতে সুবিধা হয়েছে এলাকার মানুষের।
উপজেলার উড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন জানায়, আব্দুর বারীকে প্রায় চার বছর হলো দেখছি রোদে পুুরে বৃষ্টিতে ভিজে কষ্টের মধ্যে জীবন পার করছে। সরকারিভাবে বা দেশের কোন বিত্তশালী ব্যক্তি যদি তাকে একটি দোকানঘর তুলে দেয়, তাহলে হয়তো আগামী দিনগুলোতে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে পারতো।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ,সোহেল রানা সালু বলেন বিগত কয়েটি বন্যায় আব্দুল বারীসহ অনেকেই সর্বহারা হয়। আব্দুল বারী এখন ভ্রাম্যমাণ সেলুন চুল কাটার কাজ করছে। কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবকষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন আব্দুল বারী আগের মত সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে তাই তাকে একটি দোকান দিয়ে সাহায্যর হাত বাড়ানোর আহবান জানান এই জনপ্রতিনিধি।
ফুলছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন. বলেন, স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে আব্দুল বারীর ভ্রাম্যমাণ সেলুন বিষয়ে জানতে পেরেছি। কেতকিরহাট থেকে উড়িয়া পর্যন্ত যে কোন একটি বাজারে তার দোকানের পজিশন নিয়ে একটি দোকান ঘর পজেশন দেওয়া হলে ।হয়তো তিনি তিনি স্থায়ীভাবে একই স্থান থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।